বাগেরহাটে বন্ধুসভার সভাপতিসহ ৫ নারী পেলেন জয়িতা সম্মাননা

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘জয়িতা অন্বেষণ’ কার্যক্রমের আওতায় বাগেরহাট জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত পাঁচজন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। গত রোববার বিকেলে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে নিজ নিজ ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বাগেরহাটে বন্ধুসভার সভাপতিসহ পাঁচ নারীকে এ সম্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস।

বাগেরহাট থেকে নির্বাচিত পাঁচজন জয়িতা নারী হলেন—অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরিতে জেলার রামপাল উপজেলার মাধবী বিশ্বাস, শিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী ক্যাটাগরিতে বাগেরহাট সদরের রিজিয়া পারভীন, সফল জননী ক্যাটাগরিতে মোল্লাহাট উপজেলার মমতাজ বেগম, নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করেছেন যে নারী ক্যাটাগরিতে চিতলমারীর স্বপ্না বাড়ৈ এবং সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা ক্যাটাগরিতে বাগেরহাট সদরের আম্বিয়া খাতুন। অনুষ্ঠানে জেলা পর্যায়ে নির্বাচিত শেষ্ঠ পাঁচ জয়িতা নারীকে ক্রেস্ট, সম্মাননা সনদ ও উত্তরীয় পরিয়ে দেওয়া হয়।

শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী ক্যাটাগরিতে জয়িতা সম্মাননা পাওয়া রিজিয়া পারভীন প্রথম আলো বন্ধুসভা, বাগেরহাটের সভাপতি। তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তরের প্রকল্প সমন্বয়কারী।

জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা হাসনা হেনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জহিরুল ইসলাম, জেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার দপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার মনোয়ারা খানম প্রমুখ।
এর আগে নারী উন্নয়নে অবদান রাখায় জেলার নয়টি উপজেলা থেকে পাঁচটি বিভাগে পাঁচজন করে মোট ৪৫ জন নারীকে জয়িতা সম্মাননা দেওয়া হয়। সেখান থেকে নির্বাচিত পাঁচজন শ্রেষ্ঠ জয়িতাকে জেলা পর্যায়ে সম্মাননা দেওয়া হয়।

রিজিয়া পারভীন ১৯৭৬ রামপাল উপজেলার এক দুর্গম কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। সেই সময়ে ওই এলাকায় নৌকাই ছিল যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সে সময় বাগেরহাট যেতে হলে নৌকায় করে খুলনায় গিয়ে সেখান থেকে ট্রেনে যেতে হতো তাঁর। বাড়ি থেকে স্কুলের দূরত্ব ছিল প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। বর্ষায় হাঁটুপানি মাড়িয়ে যেতে হতো স্কুলে। রক্ষণশীল ধর্মীয় পরিবারে বেড়ে ওঠা রিজিয়া পারভীন এর মধ্যে থেকে চালিয়ে যান লেখাপড়া। পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তিও পান। ১৯৯২ সালে এসএসসিতে উত্তীর্ণ হন প্রথম বিভাগে।
এসএসসি পরীক্ষার আগে–পরে একাধিকবার তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের চেষ্টা হয় বাবা ও পরিবার থেকে। পারিবারিক নানা চড়াই-উতরাই উপেক্ষা করে ভর্তি হন খুলনা মহিলা কলেজে। সেখান থেকে ১৯৯৪ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন তিনি। পরিবার থেকে আর্থিক সহযোগিতা না পেয়ে খণ্ডকালীন চাকরি ও টিউশনি করে চালিয়েছেন নিজের লেখাপড়া।

জয়িতা সম্মাননা পাওয়া রিজিয়া পারভীন বলেন, ‘সপ্তম শ্রেণিতে থাকতে প্রথম নিজের বিয়ে রুখেছি। এরপর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সকালে ক্লাস আর বিকেলে খণ্ডকালীন চাকরি করতাম। পড়াশোনার পাশাপাশি খুলনায় তখন রূপান্তর নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় খণ্ডকালীন চাকরি শুরু করি। চাকরির পাশাপশি পড়াশোনা করে ১৯৯৮ সালে এমএম পাস করি। ২০০১ সালে রূপান্তরের বাগেরহাটে এরিয়া অফিসে বদলি হয়ে আসি।’

পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে করেন নিজের পছন্দেই। বিয়ের সময় তাঁর তৃতীয় বোন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। এসএসসির পর তাঁকেও বিয়ে দেওয়া চেষ্টা হয়। সেই বিয়েও রোখেন তিনি। পরে নিজের কাছে রেখে পড়াশোনা করান।

নারী, শিশুসহ সমাজের সুবিধাবঞ্চিতদের নিয়ে কাজ করছেন দীর্ঘদিন ধরে। প্রথম আলো বন্ধুসভার সঙ্গে যুক্ত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। ২০১৭ সালে ছিলে বন্ধুসভার প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক। বর্তমান কমিটির সভাপতি তিনি। চাকরির পাশাপশি বিভিন্ন সভা ও অনুষ্ঠানে নিজের জীবনের গল্প বলে কন্যাশিশুদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

রিজিয়া পারভীন বলেন, ‘এখন অনেক ক্ষেত্রে সমাজে নারীদের অবজ্ঞার চোখে দেখা হয়। তবে আগের চেয়ে অনেক পরিবর্তন এসেছে। সময় পাল্টেছে। নারীরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে এখন সরকারি–বেসরকারি পর্যায়ে চাকরি করছেন। সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন। এগিয়ে চলেছেন। আমাদের কাজের এই স্বীকৃতি অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। আমি সত্যিই গর্বিত।’

Advertisement