পূজার সাজে

ব্রিট বাংলা ডেস্ক :: দেবী দুর্গা হলেন শক্তির রূপ। যিনি দুর্গতি ও সংকট থেকে রক্ষা করেন। অন্য মতে যে দেবী দুর্গম নামক অসুরকে বধ করেছিলেন। দুর্গাপূজা হিন্দু সমাজেই প্রচলিত। তবে বাঙালি হিন্দু সমাজে এটি অন্যতম বিশেষ ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। এটি পারিবারিক ও অন্যান্য সামাজিক সম্মিলন, কেনাকাটা ও উপহার প্রদান, উপবাস, মণ্ডপ দর্শন, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতিমা বিসর্জন ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। দুর্গাপূজার কয়েকদিন ধরেই আনুষ্ঠানিকতা থাকে। যেমন- দুর্গাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী, মহানবমী, বিজয়া দশমী।

দুর্গাপূজা উদযাপন শুরু হয় দুর্গাষষ্ঠী দিয়ে। সকালের সাজ হতে পারে সুতি শাড়ি, সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে। বেইজ মেকআপ খুব ভারি না করে হালকা প্রাইমার, ফাউন্ডেশন দিতে পারেন। হালকা গোলাপি ব্যাশন দিয়ে নিতে পারেন। ঠোঁট কালারে যোগ করুন পিচ, বাদামি বা যে কোনো ন্যুড লিপস্টিক। চোখের ক্ষেত্রে ভারী মাশকারা ও হালকা আই শ্যাডো। অর্থাৎ সব মিলিয়ে খুব কম সময়ে সুন্দর গোছানো একটা লুক হতে পারে ষষ্ঠীর সকালে। সন্ধ্যা বা রাতে সবাই পূজা দেখতে বের হয়। সে ক্ষেত্রে সাজটা একটু জমকালো হতেই পারে। চুলে করে নিন মেসি বান, এটি টিনএজার ও মধ্যবয়সী সবার সঙ্গেই যায় অথবা মেসি কার্ল। কন্টোরিং করে নিন বাদামি কোন্টোর দিয়ে, চোখের সাজ হবে একটু ভারী। ঘন মাশকারা বা আই ল্যাশ লাগিয়ে নিন। স্মোকি আই ভালো লাগবে। সে ক্ষেত্রে কালো ও বাদামি শ্যাডো দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন স্মোকি আই। আবার পোশাকের রঙের সঙ্গে মিলিয়েও শ্যাডো ব্যবহার করতে পারেন। গাঢ় রঙের লিপস্টিক বা হালকা রঙের দুটোই ভালো লাগবে রাতের সাজে। পোশাকের রঙের থেকে বিপরীত রঙের লিপস্টিক লাগাতে পারেন।

সকালের সাজে এখনও যেহেতু গরম খুব একটা কমেনি এবং বৃষ্টির সম্ভাবনাও আছে তাই সুতি, হাফ সিল্ক্ক, তসর পরতে পারেন। শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ লং ফ্রক, সিঙ্গেল কামিজের সঙ্গে পালাজ্জো, টিউনিক সবই হতে পারে পূজার সকাল বেলার পোশাক। তবে পাঁচ দিনের জন্য পাঁচটি রঙ ও চুলের ধরন আগে থেকেই ঠিক করে নিতে পারেন। সপ্তমীর সারা দিন হতে পারে যে কোনো এক রঙকেন্দ্রিক। যেমন হলুদ বা বাসন্তীর সঙ্গে লালের কম্বিনেশনের পোশাক। দিনের সাজ থেকে রাতের সাজ হবে একটু ভিন্ন ও জমকালো। দিনের বেলার তাপমাত্রা রাতে কমে আসবে অনেকটাই। তাই দিনের বেলা ঘুরাঘুরিতে এ কথা মাথায় রেখে করতে পারেন সাজ ও পোশাকের পরিকল্পনা। দিনের সাজ-পোশাক একটু হালকা রঙ এবং ফেব্রিক বেছে নিয়ে রাতের জন্য রেখে দিতে পারেন গাঢ় রঙ।

কুমারী পূজা মহাষ্টমীর অন্যতম প্রধান বিষয়। কুমারী পূজার আনুষ্ঠানিকতায় শাড়ি পরতে পারেন যে কোনো বয়সের নারীরা। সঙ্গে কপালে লাল টিপ এ সময়ের জন্য মানিয়ে যাবে বেশ। হাত ভরে চুড়ি পরতে পারেন।

পূজায় খুব ভিড় থাকে তাই চেষ্টা করুন এমন কাপড় পরতে, যাতে স্বস্তিতে নিঃশ্বাস নিতে পারেন। ঘুরে বেড়াতে পারেন ইচ্ছামতো পাখনা মেলে। সারাদিনের জন্য সাজটাও আরামদায়ক হওয়া চাই। বৃষ্টি এবং তাপমাত্রার পারদের উচ্চমাত্রার কথা মাথায় রেখে পানি নিরোধী প্রসাধনী ব্যবহার করুন। তাহলে বৃষ্টির পানি কিংবা ঘাম আপনাকে সেভাবে করতে পারবে না নাস্তানাবুদ।

এরপর আসে বিজয়া দশমী। দশমীতে বিদায় ও বিসর্জনের বিষয়টা জড়িত। সাদা শাড়ি লাল পাড় পূজার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য বহন করে। কালে কালে এই পোশাক পরছে মানুষ কিন্তু এর জনপ্রিয়তা বা আবেদন বিন্দুমাত্র কমেনি। সাদা জমিনের সঙ্গে লাল পাড় শাড়িতে স্নিগ্ধ ও সুন্দর লাগে যে কোনো বয়সী নারীকেই। বেনারসি, কাতান, সিল্ক্ক, গাদোয়াল, জামদানি, হাফসিল্ক্ক, এণ্ডি সিল্ক্ক এমন কি সুতি তাঁতও হতে পারে এই সাদা-লাল শাড়ির উপাদান। রূপ বিশেষজ্ঞ ফারনাজ আলম মনে করেন, দশমীর দিন চুলে জড়িয়ে নিন তাজা ফুল বা ফুলের মালা। এদিন সাজে প্রাইমার দিয়ে ফাউন্ডেশন লাগিয়ে নিন। তারপর কন্সিলার দিয়ে নিতে পারেন। সকালের জন্য চোখের সাজে বাদামির সঙ্গে হালকা সোনালি আই শ্যাডো দিয়ে একটু গর্জিয়াস করে নিতে পারেন চোখ। ঘন করে মাশকারা লাগিয়ে চোখের পাতায় ভলিউম তৈরি করে নিন। এ ছাড়া চোখের ওপরে আইলাইনার ও নিচে কাজল লাগাতে পারেন। কেউ কেউ মোটা করে কাজল লাগাতে পছন্দ করেন। লাল শাড়ির সঙ্গে লাল লিপস্টিক ভালো লাগে। ঠোঁটে লাল রঙ একটি জনপ্রিয় ট্রেন্ড। হালকা বাদামি ও ন্যুড কালারও ভালো লাগে এ সময়ে। হাত ভরে কাচের চুড়ির সঙ্গে ধাতব চুড়ি মিলিয়ে পরতে পারেন। কপালে লাল টিপ আবশ্যক। হতে পারে তা ছোট বা বড়। এই সাজে দশমীর সিঁদুর খেলায় খুব মানাবে।

পূজার সাজ পোশাক যদিও নির্ভর করে ব্যক্তিগত রুচি ও পছন্দের ওপর। সবার পছন্দের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দেশের ফ্যাশন হাউসগুলো তৈরি করে প্রতিটি উৎসব অনুষ্ঠানের বিশেষ কালেকশন। পূজার আয়োজন নিয়ে কথা হচ্ছিল সাদা-কালোর কর্ণধার আজহারুল হক আজাদের সঙ্গে। বেয়োন্ড সাদা-কালো পূজার জন্য নিয়ে এসেছে বিশেষ সংগ্রহ। সাদা রঙকে প্রাধান্য দিয়েছেন আবার সঙ্গে আছে সোনালি। দুর্গা প্রতিমার মুখকে মোটিফ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ছোট-বড় বিভিন্ন সাইজের প্রতিমার মুখ পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে ব্লক, স্ট্ক্রিনপ্রিন্ট ইত্যাদিতে। সাদা-লাল, লাল-গোল্ডেন এসব মিশ্রণের পোশাক তাদের এ সময়ের সংগ্রহে প্রাধান্য পেয়েছে। প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করেছেন। কামিজ, কুর্তি, টিউনিক, সালোয়ার, পা প্যান্টে নতুন ধরন ও কাট ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া এই মিশ্র আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে সুতি, আরামদায়ক কাপড়ের ওপর প্রাধান্য দিয়েছি, বলছিলেন আজহারুল হক আজাদ।

এই পূজা উপলক্ষে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়েরই নয়, সব ধর্মাবলম্বীই মেতে ওঠে উৎসবের আমাজে। পূজার আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে। বিপণিবিতান ও রূপচর্চা কেন্দ্রে তাই বাড়তি ভিড় জমেছে।

Advertisement